প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ জাপানে যান – শুধুমাত্র ২০১৮ সালে জাপান ৩০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক পেয়েছিল। এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে দেখার জন্য অনেক কিছু রয়েছে, যা আধুনিকতা, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং প্রকৃতির একটি নিখুঁত মিশ্রণ। উপরন্তু, এটি ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলির মধ্যে একটি এবং ২০২২ সালে জাপানের ভিসা পাওয়া আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই নিবন্ধটি জাপানের ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া, জাপানি ভিসার ধরন এবং জাপান ভিসা নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
জাপান প্রবেশের জন্য কার ভিসা দরকার?
১। আপনার জাতীয়তা- ভিসা-মুক্ত দেশের নাগরিকরা যখন স্বল্প সময়ের জন্য যেমন পর্যটন, সামাজিক পরিদর্শন, ব্যবসা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জাপানে ভ্রমণ করেন তখন তাদের জাতীয়তা বিবেচনা করে ভিসা করার প্রয়োজন হয় না।এই ধরনের ভিসায় সর্বচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত ভিসা-মুক্ত থাকার অনুমতি দেয়া হয়।
২। আপনার থাকার মেয়াদ এবং উদ্দেশ্য- ভিসা-মুক্ত দেশগুলির নাগরিকদের জাপানি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে যদি তারা চাকরি, অধ্যয়ন, বিয়ে, বা অন্য কোনও দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্যে দেশে প্রবেশ করতে চায়।
জাপান ভিসা নীতির আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন।
জাপান ভিসার প্রকারভেদ
স্বল্প-মেয়াদী / অস্থায়ী ভিসা, দেয়া হয় যারা পর্যটন, পরিদর্শন, ব্যবসা বা অন্যান্য বিনোদনমূলক বা স্বল্পমেয়াদী উদ্দেশ্যে জাপানে প্রবেশ করতে চায়। স্বল্প-মেয়াদী এ ভিসায় জাপানে কোন ভাবেই কর্মসংস্থানে নিযুক্ত হতে দেবে না। ভ্রমনের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে জাপান স্বল্প-মেয়াদী যে ভিসাগুল দেয় সেগুল হলঃ
- ট্যুরিস্ট ভিসা, যারা পর্যটন বা পরিবার বা বন্ধুদের সাথে ভ্রমণের জন্য জাপানে যেতে চান।
- বিজনেস ভিসা, যারা জাপানে মিটিং, কনফারেন্স, আলোচনায় অংশ নিতে বা অন্য কোন ব্যবসা-সম্পর্কিত উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করতে চান।
- ট্রানজিট ভিসা, যারা জাপান হয়ে অন্য গন্তব্য বা তৃতীয় কোন দেশে যাওয়ার পথে ট্রানজিট নিতে চান।
দীর্ঘমেয়াদী ভিসা, দেয়া হয় তাদেরকে যারা পর্যটনের সাথে সম্পর্কিত নয়, যেমন কাজ করা, অধ্যয়ন করা বা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগদানের উদ্দেশ্যে জাপানে প্রবেশ করতে চায়। ভ্রমনের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে জাপান দীর্ঘমেয়াদী যে ভিসাগুল দেয় সেগুল হলঃ
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, যারা জাপানে চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চায়।
- স্টুডেন্ট ভিসা, আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য যারা জাপানে পড়াশোনা করতে চায়।
- ম্যারেজ ভিসা, যারা একজন জাপানি নাগরিককে বিয়ে করেছেন এবং সেখানে তাদের সাথে যোগ দিতে চান।
- হাইলি স্কিলড প্রফেশনাল ভিসা, নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে এই ভিসা কারা পাবেন। এই ভিসাটি মূলত পয়েন্ট-ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে দেয়া হয়। এই ভিসায় আপনি দীর্ঘদিন থাকার অনুমতি পাবেন এবং ওয়ার্ক ভিসার চেয়েও বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।
- ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা, এই ভিসা মূলত সেইসব দেশের নাগরিকদের দেয়া হয় জাদের সাথে ওয়ার্কিং হলিডে স্কিম চুক্তি আছে। এটি অইসব দেশের তরুণদের জাপানে যেতে এবং সেখানে এক বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়।
জাপান ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?
আপনি যখন জাপানি ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করতে যাবেন, তখন আপনার কাছে বেশ কিছু সহায়ক নথিপত্র থাকতে হবে। জাপান ট্যুরিস্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হল:
- সঠিকভাবে পূরণকৃত এবং স্বাক্ষরিত জাপান ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদন ফর্ম। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (এখানে) থেকে আবেদনপত্রের একটি কপি ডাউনলোড করতে পারেন। আবেদনপত্রের সব পয়েন্টগুলো সঠিকভাবে পুরন করুন। যদি কোন পয়েন্ট আপনার জন্য প্রযোজ্য না হয়, তাহলে এটিকে ফাঁকা না রেখে “N/A” লিখুন।
- কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ সম্পূর্ণ পাসপোর্ট এবং অবশ্যই ২ টি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যেন ভিসা স্ট্যম্প করা জায়।
- নিম্নলিখিত স্পেসিফিকেশন সহ নিজের পাসপোর্ট-আকারের ছবি:
- ছবির মাপ: ২ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি
- সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড
- গত ছয় মাসে নেওয়া ছবি
- আপনার পুরো মুখটি দৃশ্যমান হতে হবে
- ছবির পিছনে আপনার নাম এবং জন্মতারিখ লিখতে হবে
- টিকিট বুকিং কপি যেখানে আপনার নাম এবং জাপানে যাওয়া এবং ফেরত আসার তারিখ সঠিকভাবে থাকতে হবে।
- হোটেল বুকিং কপি যেখানে আপনার নাম উল্লেখ থাকবে।
- জাপানে আপনার দৈনন্দিন কার্যক্রমের একটি ভ্রমণসূচী তৈরি করতে হবে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (এখানে) জাপান ভিসার জন্য একটি নমুনা ভ্রমণসূচী খুঁজে পেতে পারেন।
- আপনার যদি জাপানে গ্যারান্টার থাকে:
- গ্যারান্টারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র
- যদি গ্যারান্টার আপনার থাকার জন্যে অর্থের সাহায্য করে তবে গ্যারান্টারের স্পন্সরশীপ চিঠি এবং তাদের বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি।
- রেসিডেন্স সার্টিফিকেট কপি, যদি তারা জাপানের বাইরের বাসিন্দা হয়।
- গ্যারান্টারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র
- আপনি যদি নিজেই নিজের ট্রিপের অর্থায়ন করেন তাহলে বিগত ৬ মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট কপি।
- আপনার সাম্প্রতিক আয়কর রিটার্ন (যদি আপনার আয়কর রিটার্ন না থাকে, তাহলে আপনি কারণ ব্যাখ্যা করে একটি চিঠি জমা দিতে পারবেন)।
- আপনি যদি কাউকে দেখতে যান (বন্ধু বা পরিবার) তাহলে সম্পর্কের প্রমাণপত্র দিতে হবে, যেমন:
- আত্মীয়/পরিবারের সদস্যদের জন্য: নাগরিক অবস্থার নথি, যেমন জন্মসনদ বা নিকানামাহ।
- বন্ধুদের জন্য: একসাথে ছবি, রসিদ, ফোন কলের বিশদ বিবরণ এবং আপনার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে এমন একটি চিঠি।
- আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে আপনার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অনাপত্তি সনদের কপি।
- সিভিল স্ট্যাটাস ডকুমেন্টস (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে): জন্ম সনদ, নিকাহনামা, ইত্যাদি।
জাপান ভিসা প্রসেসঃ
জাপান সরকার শুধুমাত্র তাদের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের মাধ্যমে ভিসা প্রদান করে।কিছু প্রস্নউত্তর এর মাদ্ধমে জেনে নেয়া যাক জাপানের ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়াটিঃ
কোথায় “ভিসা আবেদনপত্র” পাব এবং পূরণ করব?
- জাপানি ভিসার আবেদনপত্র প্রতি কার্যদিবসে দূতাবাসের গেটে বিতরণ করা হয়। আপনি ভিসা আবেদনপত্র ডাউনলডে ক্লিক করেও তা পেতে পারেন। এছাড়াও, একই ফর্ম ইন্টারনেট “জাপান ভিসা ফর্ম” (Japan Visa Form) লিখে সার্চ করেও পাওয়া যাবে।
- ফর্মটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে (ফর্ম পুরন করার গাইড লাইন পেতে এখানে ক্লিক করুন)
কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করব?
- আবেদন জমা দেওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন হলে জাপানি দূতাবাস/কনস্যুলেটের সাথে [email protected] এই মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। এপয়েন্মেন্ট না নিয়েও সকাল ৯ঃ০০ টা থেকে সকাল ১১ঃ০০ টার মধ্যে এম্বাসিতে গিয়ে আপনার ফাইল জমা দিতে পারবেন।
- ফাইল জমা দেবার পর আবেদনের রসিদ কপি নিতে হবে।
- ভিসার আবেদন করার পর যদি রিফিউজ হয় তবে ৬ মাস পর পুনরায় আবেদন করা যাবে।
কিভাবে ইন্টারভিউএ অংশগ্রহণ করব?
- আপনার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়ে ইন্টারভিউ নিয়া হবে।
- ইন্টারভিউ শেষে, আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হবে কিভাবে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। এই তথ্যটি আবেদনের রসিদেও লেখা আছে।
কিভাবে পাসপোর্ট ফিরত পাব?
- নির্দেশিত দিনে দুপুর ০২ঃ৩০ থেকে ০৩ঃ৩০ এর মধ্যে আপনার পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে।
- আপনাকে আবেদনের রসিদ জমা দিতে হবে।
- আপনি যদি পাসপোর্ট নিতে অন্য কাউকে পাঠান, তাহলে আপনার স্বাক্ষর সহ অনুমোদনপত্র এবং আবেদনের রসিদ সাথে দিতে হবে।
জাপান ভিসা ফি কত?
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য জাপান কোন ভিসা ফি নেয় না।
জাপান ভিসার মেয়াদ কত দিন?
জাপান ভিসার মেয়াদ নির্ভর করে আপনি কতবার এন্ট্রি করতে চাচ্ছেন এবং সেইসাথে ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর।সিঙ্গেল এন্ট্রি জাপান ভিসা সর্বাধিক ৩ মাসের জন্য দেয়া হয়। আবার ভ্রমনের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে ১ থেকে ৫ বছরের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি জাপান ভিসা দেয়া হয়।
জাপানের ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ কি বাড়ানো যায়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, না, বাড়ানো যায়না। জাপানের ইমিগ্রেশন সাধারণত তাদের ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ বাড়ায় না।তবে ট্যুরিস্ট ভিসা শুধুমাত্র হঠাৎ অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা এসব ইমারজেন্সিতে বাড়ানো যেতে পারে।
জাপান ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কি ওইখানে কাজ করা যাবে?
নজাবেকাজ করা যাবে না, জাপানে ট্যুরিস্ট ভিসায় থাকাকালীন কোনো ধরনের পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কাজে নিয়োজিত হতে পারবেন না। ট্যুরিস্ট ভিসা শুধুমাত্র পর্যটন, পরিদর্শন এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে দেয়া হয়। আপনি যদি জাপানে কাজ করতে চান তবে আপনার একটি জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন হবে।