আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাকে ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ইন্দোনেশিয়াতে অন এরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা আছে।

ইন্দোনেশিয়ার ভিসার প্রকারভেদ

আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সময়কালের উপর ভিত্তি করে ইন্দোনেশিয়ার ভিসাকে নিম্নলিখিত প্রকারে ভাগ করা হয়েছে:

  • ট্যুরিস্ট ভিসা (দূতাবাস এবং অন-এরাইভাল)
  • মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা
  • বিজনেস ভিসা
  • লিমিটেড স্টে ভিসা

ট্যুরিস্ট ভিসা

ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা হল একটি একক-প্রবেশ ভিসা, যা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের দেয়া হয়। আপনি চাইলে এই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন এবং সর্বোচ্চ ৬০ দিন থাকতে পারবেন। আপনি যদি পর্যটক হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করতে চান তবে আপনি এই ধরনের ভিসা পেতে পারেন। আপনি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কাজ বা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না।

মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা

ইন্দোনেশিয়ার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা সরকারী কার্যক্রম, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম বা পারিবারিক সফরের জন্য দেয়া হয়। এই ভিসার মেয়াদ ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছরের জন্য হয়ে থাকে। এই ধরনের ভিসা পেতে আপনাকে ইন্দোনেশিয়ার ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ইমিগ্রেশন থেকে অনুমোদন পেতে হবে।

বিজনেস ভিসা

ইন্দোনেশিয়ার বিজনেস ভিসা হল এক ধরনের মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা যার মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটির সাহায্যে ভ্রমণকারী একাধিকবার ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করতে পারে এবং যেকোনো প্রবেশে ৬০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

এই ভিসার সাহায্যে আপনি যেকোনো বিজনেস মিটিং বা প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারবেন এবং অন্যান্য ব্যবসা-সম্পর্কিত কাজ করতে পারবেন, তবে আপনি ইন্দোনেশিয়াতে কোন প্রকার চাকরি নিতে পারবেন না।

লিমিটেড স্টে ভিসা

ইন্দোনেশিয়াতে দীর্ঘ দিন থাকার পরিকল্পনা করলে আপনাকে এই লিমিটেড স্টে ভিসা  নিতে হবে। আপনি ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করতে, পড়াশোনা করতে, পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগ দিতে চাইলে এই ধরনের ভিসা আপনার প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ:

  • ওয়ার্ক ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • ফ্যামিলি ভিসা
  • রিটায়ার্মেন্ট ভিসা
  • ইডিজিটাল নোমেড ভিসা

এই ভিসায় আবেদন করার জন্য ইন্দোনেশিয়াতে আপনার স্পনসর বা গ্যারান্টরকে (যেমন আপনার নিয়োগকর্তা, স্কুল বা পরিবারের সদস্য) জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিরেক্টরেট জেনারেলে ভিসা অনুমোদনের চিঠির জন্য আবেদন করতে হবে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ইমিগ্রেশন আপনার ভিসা অনুমোদন করলে তারা ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস বা কনস্যুলেটকে অবহিত করবেন এবং দূতাবাস আপনার ভিসা দেবে।

কিভাবে ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন?

আপনি নিম্নলিখিত উপায়ে একটি ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন:

  • ইন্দোনেশিয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছানর সময় (অন-এরাইভাল)
  • ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস থেকে।

অন-এরাইভাল ইন্দোনেশিয়া ভিসা কি?

অন-এরাইভাল ইন্দোনেশিয়া ভিসা হল এক ধরনের ট্যুরিস্ট ভিসা। এটি শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ায় ৩০ দিন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেবে।অন-এরাইভাল ভিসায় আপনি কোনও পরিস্থিতিতে আপনার থাকার মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না। ৩০ দিন শেষ হওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই ইন্দোনেশিয়া থেকে চলে আসতে হবে।

আর আপনি যদি ইন্দোনেশিয়া দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে  ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনি আপনার ভিসার মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারেন এবং ভিসার মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়াতে পারবেন। 

কোন কোন দেশ ইন্দোনেশিয়া অন-এরাইভাল ভিসা পায় তার একটি চার্ট নীচে দেয়া হোলঃ

AlgeriaAndorraArmenia
ArgentinaAustraliaAustria
BahrainBelarusBelgium
BrazilBulgariaBangladesh
ChinaCroatiaCyprus
Czech RepublicDenmarkEgypt
EstoniaFijiFinland
FranceGermanyGreece
HungaryIcelandIndia
IrelandItalyJapan
KuwaitLatviaLibya
LiechtensteinLithuaniaLuxemburg
MaldivesMaltaMexico
MonacoNew ZealandNetherlands
NorwayOmanPanama
Papua New GuineaPolandPortugal
QatarRomaniaRussia
Saudi ArabiaSouth AfricaSouth Korea
SlovakiaSloveniaSpain
SurinameSwedenSwitzerland
SeychellesTaiwanTimor Leste
TunisiaTurkeyUnited Arab Emirates
United KingdomUnited StatesBangladesh
ইন্দোনেশিয়া অন-এরাইভাল ভিসা নিয়ে যেসব দেশ ইন্দোনেশিয়া প্রবেশ করতে পারবে

ইন্দোনেশিয়া ভিসা অন এরাইভাল প্রসেস

অন-এরাইভাল ভিসার জন্য আবেদন করতে, আপনাকে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবন্দরে ভিসা কাউন্টারগুলিতে যেতে হবে এবং আপনাকে নিন্মক্ত ডকুমেন্টসগুলো উপস্থাপন করতে হবে:

  • আপনার পাসপোর্ট. যার মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি হতে হবে। 
  • কনফার্ম ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট
  • ভিসা অন এরাইভাল ফি। ইন্দোনেশিয়া ভিসা অন অ্যারাইভাল খরচ ৩৫ ইউ এস ডলার।

ইন্দোনেশিয়া ভিসা অন অ্যারাইভাল এক্সটেনশন

অন-এরাইভাল ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আপনাকে ইন্দোনেশিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে। অবশ্যই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৭ দিন আগে। সেখানে, আপনাকে ৩৫ ইউ এস ডলার পেমেন্ট করতে হবে এবং  আপনার  ভিসার আরও ৩০ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয়া হবে।

দূতাবাস/কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া

ঢাকায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিসে যাবার আগে আপনাকে অনলাইনে ভিসা আবেদন করতে হবে। ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে ফর্ম পূরণের পর সেটার প্রিন্ট কপি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। অন্তত দুই সপ্তাহ হাতে নিয়ে ভিসা আবেদন জমা দেয়া উচিত।

ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য যেসব ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে

ভিসার জন্য আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে তা নীচে দেয়া হোলঃ

  • সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র (ফর্মটি এখান থেকে ডাউনলোড করুন)
  • কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টে অন্তত ২ টি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে।
  • নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয়তা সহ পাসপোর্ট আকারের ছবি:
    • মাত্রা: 3 সেমি x 4 সেমি বা 4 সেমি x 6 সেমি
    • সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড
    • সম্প্রতি নেওয়া (গত তিন মাস)
    • আপনার মুখ সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হতে হবে
    • আপনি সরাসরি সামনে সোজা হয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে
    • ইন্দোনেশিয়ার ভিসা আবেদনপত্রের নির্দিষ্ট স্থানে ছবিটি অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে
  • রাউন্ড-ট্রিপ এয়ার টিকিট কপি। যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে রয়েছে।
  • বিগত ৩ মাসের ব্যাংক স্ট্যট্মেন্ট এবং ব্যালেন্সে অবশ্যই ২০০০ ডলারের সম্পরিমান অর্থ থাকতে হবে।
  • আপনি যদি ইন্দোনেশিয়ায় বন্ধু বা পরিবারের সাথে দেখা করতে যান তাহলে তাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্রের পাশাপাশি তাদের আইডি কার্ড বা পাসপোর্টের কপি।
  • ব্যবসা, সম্মেলন বা মিটিং এর উদ্দেশ্যে ভ্রমন করলে বাংলাদেশ ভিত্তিক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র বা রেফারেন্স চিঠি এবং ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক অংশীদার কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের কপি।
  • ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফি পরিশোধ করার রিসিপ্ট।
  • ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের কপি।
  • কোভিড-১৯ এর সার্টিফিকেট। অবশ্যই কমপক্ষে ২ ডোস টিকা নেয়া থাকতে হবে।
  • কোভিড-১৯ প্রোটোকল মেনে চলার জন্য বিবৃতি পত্র।
  • মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য ইন্দোনেশিয়ার ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ইমিগ্রেশন থেকে ভিসা অনুমোদনের চিঠি। ইন্দোনেশিয়াতে আপনার স্পনসরকে অবশ্যই আপনার পক্ষ হতে এটি সংগ্রহ করতে হবে।

ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং করতে সময় কত দিন প্রয়োজন? 

সাধারণত চার কর্মদিবসের মধ্য ভিসা প্রসেসিং এর কাজ শেষ হয়ে যায় (জমা দেয়ার দিন বাদে)। ভিসা হয়ে গেলে আবেদনকারীকে ফোনে জানানো হয়। তবে কিছু কিছু আবেদনে ইন্দোনেশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সাধারণত তিন সপ্তাহের মধ্যেই কাজটি হয়ে যায় এবং এক্ষেত্রেও ভিসা হয়ে গেলে আবেদনকারীকে ফোনে জানিয়ে দেয়া হয়। ভিসা সংক্রান্ত  আরও তথ্যের জন্য, pk@jakarta-dhaka.com এই ঠিকানায় ই-মেইল করা যেতে পারে। আর ঢাকায় ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও (www.indonesia-dhaka.org ) ভিসা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।

ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা ফি কত?

ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা ফি হল:

  • সিঙ্গেল-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য: ৫০ ইউ এস ডলার
  • মাল্টিপল-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট/ভিজিট/বিজনেস ভিসার জন্য: ১০৫ ইউ এস ডলার
  • অন-এরাইভাল ইন্দোনেশিয়া ভিসার জন্য:৩৫ ইউ এস ডলার

বিঃ দ্রঃ ভিসা ফি পরিবর্তনশীল

ভিসা আবেদন করার সময় 

  • ভিসা জন্য আবেদন করার সময়:  সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২:৩০ মিনিট পর্যন্ত।
  • ভিসা সংগ্রহ করার সময়:  সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
  • ভিসার কার্যক্রম রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলে। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে।

কিভাবে ইন্দোনেশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা ফি পরিশোধ করতে হয়?

অন-এরাইভাল ভিসার জন্য আপনাকে এয়ারপোর্টে ভিসা কাউন্টারে গিয়ে টুরিস্ট ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে ভিসার জন্য এপ্লাই করলে সেখানেই আপনাকে ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে। 

আমি কি ইন্দোনেশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসা/ভিসা অন অ্যারাইভাল নিয়ে কাজ করতে পারি?

না, টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে আপনি কোন কাজে অংশ গ্রহন করতে পারবেন না। আপনি যদি কাজ করতে চান তবে আপনাকে ইন্দোনেশিয়া ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।