জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে সরাসরি বা অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি আবেদন করা যায়। এনআইডি বিভিন্ন কারনে সংশোধন করা লাগতে পারে। যেমন- নিজের নাম বা পিতা মাতার নামের বানানে যদি ভুল থাকে, অথবা নিজের জন্মতারিখে ভুল থাকতে পারে। আবার কিছু ছোট ভুল হলেও সেগুলো অনেক সময় আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিতে পারে, যেমন- ভুল জন্মস্থান থাকা, রক্তের গ্রুপ এ ভুল থাকা ইত্যাদি। এই সব ভুল নির্বাচন অফিসে সংশোধনের আবেদনের মাধ্যমে ঠিক করা যায়, আবার অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেও করতে পারেন, সেক্ষেত্রে লগ ইন করে যে তথ্যটি এডিট করতে চান সেটি সিলেক্ট করে, পরিবর্তন করে দিতে পারেন। তবে আপনি অনলাইনে করুন বা অফলাইনে করুন, প্রতিটি ভুল সংশোধনের জন্য সরকারি হিসাব অনুজায়ি নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হয়।জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে ফি জমা দেবার পর উক্ত সংশোধনের আবেদন সাবমিট করা যায়।

যারা এই ধরনের সংশোধনগুলো করাতে চান তারা আদৌ জানেন না যে, এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে ফিস দিতে হয়। আবার অনেকে এই ফি দেবার কথা জানলেও ফি এর পরিমাণ বা কি হারে দিতে হয় , এই সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই  থাকেনা! তাই আজ এন আই ডি সংশোধনের আদ্যপান্ত, অর্থাৎ ফি কিভাবে প্রতিবার আবেদনের ক্ষেত্রে ফি দিতে হবে, কি পরিমাণ ফি দিতে হবে, ফি প্রদানের পর কি করতে হয় এই সমস্ত বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি কোথায় দিতে হবে?

আপনি যদি অফলাইনে অর্থাৎ নির্বাচন অফিসে যেয়ে সরাসরি আবেদন করেন, তবে প্রতিটি কারেকশন এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি ব্যাংক এ জমা দিয়ে বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জমা দিয়ে রশিদ প্রিন্ট করে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

আবার আপনি অনলাইনে আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর দরকারি কাগজপত্রের স্ক্যান কপি এবং ফি প্রদান করার পর তার রিসিভ কপি সংযুক্ত করে সাবমিট করা যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে জমা দেবেন এবং কি পরিমাণ টাকা প্রতিটি সংশোধনের ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে? আসুন এবার এগুলো জেনে নেই!

এনআইডি  সংশোধন ফি , মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিং- বিকাশ এবংরকেট এর মাধ্যমে জমা দেয়া যায়। এছাড়া আরও কিছু মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ব্যাঙ্ক এর মাধ্যমে এই ফি জমা দেয়া যায়। যেহেতু এখন বিকাশ এবং রকেট খুবই জনপ্রিয় এবং খুব সহজে যেকোন ফি জমা দেয়া, তাই আসুন, বিকাশ এ ফি দেয়া যায় দেখে নিই।

এন আইডি সংশোধন ফি বিকাশে কিভাবে জমা দেবেন?

বিকাশে ফি জমা দিতে হলে প্রথমে , আপনি আপনার বিকাশ একাউন্ট এ লগইন করে নিন। এরপর পে বিল অপশন এ যেতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে কিভাবে করবেন তা পর্যায়ক্রমে লিখে দেয়া আছেঃ

১। পে বিল অপশনে যাবার পর সরকারি ফি তে ক্লিক করতে হবে।

২। এরপর NID Service  এ ক্লিক করলে কি ধরনের আবেদন সেটি সিলেক্ট করে দিতে হবে, সাথে সাথে আপনার এনআইডি নম্বরটি ইংরেজিতে নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। আবেদন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন-

  • এনআইডি ইনফো সংশোধন (NID info)
  • অন্যান্য ইনফো সংশোধন (Other info)
  • দুই ধরনের ইনফো  সংশোধন (Both info)
  • এন আই ডি duplicate Regular
  • এন আই ডি  Duplicate Urgent

নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ

এখান থেকে এনআইডি ইনফো সংশোধন বাছাই করুন। 

৩। এরপর আপনার আবেদনের ধরন অনুযায়ী সংশোধন ফি এর পরিমাণ দেখাবে। এবার পরের ধাপে যেতে ক্লিক করতে হবে।

৪। এখানে ফি এবং আর ও প্রাসঙ্গিক চার্জ থাকলে তা দেখাবে।

৫। এবার আপনার নির্ধারিত পিন দিয়ে পে বিল কনফার্ম করতে হবে।

ফি দেয়া হয়ে গেল ট্রানজেকশন আই ডি এবং বর্তমান স্টেটাস আপন সম্বলিত পে বিল কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন। 

এবার আমরা জেনে নিব, কিভাবে রকেটের মাধ্যমে ফি জমা দেবেন?

এন আইডি সংশোধন ফি রকেটে কিভাবে জমা দেবেন?

রকেটে  বিকাশের মত খুব ই সিমপ্লি এন আই ডি সঙ্ক্রান্ত যে কোন ফি জমা দেয়া যায়। দেবার প্রকিয়া অনেকটাই বিকাশ এর মত হলেও কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। আসুন জেনে নেই কিভাবে দিতে হবে-

১। লগইন করে প্রথমে বিল অপশন টি সিলেক্ট করুন।

২। এবার সার্চবক্সে Billar Number -1000 লিখে সার্চ করুন । সার্চ এর রেজাল্ট EC Bangladesh আসবে। সেটিকে সিলেক্ট করুন।

৩। এই ধাপে আপনার এন আই ডি কার্ডের নাম্বারটি নির্ভুলভাবে টাইপ করুন।

৪। বিকাশের মত আবেদনের ধরন অর্থাৎ কি কারণে ফিস দিচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করুন। নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।

৫। যদি রকেট একাউন্ট নাম্বার, আপনার ব্যক্তিগত হয়, সেক্ষেত্রে Self সিলেক্ট করুন, আর যদি অন্য কারও হয়, তাহলে Other সিলেক্ট করুন।

৬। যার আইডি সংশোধন করছেন, তার মোবাইল নাম্বারটি লিখে দিন।

৭।এরপর Validate বাটনে ক্লিক করে আপনার ফিস প্রদানের প্রকিয়া সম্পন্ন করুন।

কিভাবে অফলাইনে অর্থাৎ ব্যাঙ্কেরমাধ্যমেসংশোধনফিজমাদিবেন?

আপনি চাইলে অনলাইনে ফি না দিয়ে সরাসরি পে-অর্ডার/ ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এর অনুকূলে পাঠাতে পারেন। এছাড়াও ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখায় এবং সোনালি ব্যাংকের ট্রেজারি শাখা সমূহে এনআইডি এর ফি জমা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ফি এর উপর শতকরা ১৫ টাকা মূসক দিতে হয়।

সংশোধনের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ টাকা ফি দিতে হয়?

আপনার এনআইডি কার্ড নিবন্ধন এর সময় যে সমস্থ তথ্য, নাগরিক ফরম-২ প্রদান করেছিলেন, অর্থাৎ যে সমস্ত তথ্য , এনআইডি হাতে পাবার পর তাতে মুদ্রিত বা  ছাপা থাকে,যেমনঃ নিজের নাম(বাংলা ও ইংরেজিতে), পিতা/মাতার নাম, স্বামীর নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান,রক্তের গ্রুপ  ইত্যাদি) সংশোধন করতে নিম্নলিখিত হারে ফিস প্রযোজ্য হবে। ফিস এর সাথে ভ্যাট সংযুক্ত রয়েছে।

সংশোধন টাকা
১ম বার ২৩০ টাকা
২য় বার ৩৪৫ টাকা
৩য় বার ৫৭৫ টাকা
সংশোধন ফি

ঐ সমস্ত তথ্য যা জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডিতে মুদ্রিত থাকেনা কিন্তু তারপরও কোন প্রয়োজনে সংশোধন করতে হচ্ছে যেমন- পেশা, ধরম,শিক্ষাগত যোগ্যতা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি ,এসব ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত হারে ফি দিতে হবে। এই সমস্ত ক্ষেত্রেও মুসক সংযুক্ত রয়েছে।

সংশোধন টাকা
১ম বার ১১৫ টাকা
২য় বার ২৩০ টাকা
৩য় বার ৩৪৫ টাকা
সংশোধন ফি (২)

উপরোক্ত ফিসগুলোর রেফারেন্স নির্বাচন কমিশন এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ফিস এর পরিমাণগুলো যেকোন সরকারি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে পরিবর্তন, পরিমার্জন করা হতে পারে। তাই আমাদের সম্মানিত পাঠক দেরকে ওয়েবসাইট এ যেয়ে ফিস ট্যাব থেকে ফিস এর পরিমাণ দেখে নেবার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

কি কি কারণে আপনার ভোটার আই ডি কার্ড সংশোধন করতে হয়, সেগুলো জানতে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম এই লেখাটি পড়তে পারেন। আবার কেউ যদি এনআইডি হারিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে আমাদের ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে করণীয় কি? এই লেখা পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে বিদায়  নিচ্ছি।