অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কিভাবে করতে হয়? এন আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পতত্রে নিজের নাম, বাবার নাম এবং মায়ের নাম ভুল আসতে পারে। একই ভাবে আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ বা ঠিকানাও অনেক সময় ভুল আসে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো আপনার একাডেমীক বা চাকরীর ক্ষেত্র সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিতে পারে। এজন্য কিভাবে এই সংশোধনগুলো করতে হবে, কোন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনাকে এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে, রেফারেন্স হিসেবে কি কি জমা দিতে হবে, ইত্যাদি আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আই ডি কার্ড সংশোধন করার প্রক্রিয়া ?

অনলাইনের আবেদনের মাধ্যমেঃ আপনার এন আইডি তে যে কোন ধরনের ভুল সংশোধন করার জন্য , অনলাইনে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ গিয়ে আপনাকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।এরপর লগইন করলে আপনার সমস্ত তথ্য দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার যা যা, পরিবর্তন করতে হবে এডিট করে আবেদন করতে পারেন।
অফিসে গিয়ে আবেদনের মাধ্যমেঃ এক্ষেত্রে থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম-২ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সেটি যথাযথভাবে পূরণ করে আবেদন করতে হবে।তবে এক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড সংশোধনের ফি জমা দিয়ে, রশিদ সহ খাতা জমা দিতে হয়

জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে কি করবেন?

এন আই ডি কার্ডের যত ধরনের সংশোধন আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ হচ্ছে জন্মতারিখ সংশোধন করা। কারণ অনেকে ইচ্ছাপূর্বক বা অনৈতিকভাবে আসল জন্মতারিখ কে ভুল বলে , নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বয়স কমাতে বা বাড়াতে চায়! এ কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের কাগজ পত্র দলিল বা রেফারেন্স হিসেবে দেখাতে বলেন। ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য যেসমস্ত কাগজ এই ক্ষেত্রে আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়, তা হলঃ

এস এস সি সনদঃ এস এস সি বা সমমানের সনদে জন্ম তারিখ লেখা থাকে, এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়। কারও যদি এস এস সি সার্টিফিকেট না থাকে, তাহলে ৮ম শ্রেণির সনদ দেয়া জেতে পারে।

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদঃ এই ডকুমেন্ট টি যেহেতু, কোন ব্যক্তির জন্মস্থান থেকে ইস্যু করা হয়, তাই এটি অবশ্যই আবেদনের সাথে জমা দেয়া উচিত।এই ক্ষেত্রে হাতে লেখা জন্ম সনদ বর্তমানে গ্রহণ যোগ্য নয় ।

কাবিননামা/ বিয়ের সনদঃ কোন ব্যক্তি যদি বিবাহিত হন, তাহলে তার বৈবাহিক সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, কাবিননামা তে জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকে।

পাসপোর্ট কপিঃ যেহেতু পাসপোর্টে জন্ম তারিখ থাকে , সাথে সাথে এটি একটি সরকারি নথি, তাই এটির ফটোকপি আবেদনের সাথে দিয়ে দিলে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে সুবিধা হবে।

পিতার উত্তরাধিকার সনদ বা ওয়ারিশ সনদঃ আপনাকে আপনার সমস্ত ভাইবোন দের নাম, ভোটার আই ডি নম্বর এবং সম্পর্ক উল্লেখ করে ইউনিয়ন পরিষধ বা কাউন্সিলর এর কাছ থেকে পিতার ওয়ারিশ সনদ পাবার জন্য আবেদন করতে হবে। এই সনদ পেলে সেটিও জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য সংযুক্ত করতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপিঃ কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স এ উক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য থাকে যেমন- নাম , জন্ম তারিখ ইত্যাদি। তাই লাইসেন্সের কপি আবেদনের সাথে দেয়া যেতে পারে।

সকল ভাইবোনের এনআইডিঃ আবেদনের সাথে সকল ভাই বোনের এন আইডি কপি দিয়ে দিলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেটিকে বিবেচনায় এনে আপনার জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এনআইডি/ ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ টি যদি আপনার আসল জন্মতারিখ থেকে বেশি ব্যতিক্রম না হয় অর্থাৎ ভুলের পরিমাণ যদি ছোট হয় তাহলে, এস এস সি সনদ , জন্ম সনদ এগুলো দিয়ে আবেদন করলেই, আবেদন গ্রাহ্য হবে আশা করা যায়, তা না হলে, যদি অতিরিক্ত কোন কাগজ চাওয়া হলে সেটি দাখিল করতে হবে। আবার ভুল এর পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয়, অর্থাৎ কয়েক বছর হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে উপরে যতগুলো কাগজ বা নথির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সব গুলোই থাকা সাপেক্ষে দাখিল করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনার পক্ষে আপনি নীতিগত ভাবে যত বেশি কাগজ দাখিল করতে পারবেন, ততই অনুমোদনের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

সব কিছু দাখিল করার পর, সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সরাসরি তদন্ত করার পর অফিসে রিপোর্ট জমা দেবার পর, উক্ত ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ বা বর্জন করা হয়, তাই সেই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু কার্যদিবস অপেক্ষা করতে হতে পারে।

জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা কিভাবে পরিবর্তন করা যায়?

এনআইডি/ ভোটার আই ডি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করার সময় স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা দিলেও কার্ডে সাধারণত বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ থাকে। তবে মূলত সেই ঠিকানা টি উল্লেখ করা হয় , যেই ঠিকানাতে ঐ ব্যক্তি ভোট দিতে ইচ্ছুক। ভোটার যদি ১ নং ক্রমিকে ভোটার এলাকা নামের স্থানে অর্থাৎ যেই ঠিকানাতে ব্যক্তি ভোট দিতে ইচ্ছুক সেই ঠিকানা লিখে তবে সেটি কার্ডের পিছনে লেখা থাকে। তবে অনেকে সময় বিভিন্ন কারণে এই ঠিকানা ভুল আসতে পারে। এই কারণগুলো হলঃ

  • চাকুরীগত বা পড়াশুনা এই সমস্ত কারণে অনেকেই চাইলেও নিজের এলাকায় বসবাস করতে পারেন না, তারা দেখা যায় অস্থায়ীভাবে যে এলাকায় বসবাস করেন, সেই এলাকার ঠিকানাই বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার মধ্যে লিখে দেন, ফলে এন আই ডি কার্ডেও স্থায়ী ঠিকানাই প্রিন্ট হয় যায়।
  • বিয়ের আগে অধিকাংশ মহিলা, ফর্ম পুরণ করার সময় নিজের স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা একই ব্যবহার করেন। আবার যখন বিয়ে হয়ে যায়, তখন কোন মহিলা যদি স্বামীর ঠিকানায় ভোটার হতে চান, তাহলে ঠিকানা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে।

উপরেরে কারণ গুলি ছাড়াও অনেক সময় বানান ভুল বা লেখার ভুলের কারণে ঠিকানা সংশোধনের দরকার হতে পারে। এখন আসুন জেনে নেই এই প্রক্রিয়াতে আমদের করনীয় কি?

নির্বাচন কমিশন এর আওতায় ঠিকানা পরিবর্তন জনিত সেবা , অনলাইনে দেয়া এখনই শুরু হয়নি। নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে গিয়ে এই সেবা নিতে হবে। এই জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন ফরম সংগ্রহ করে তারপর অফিসের কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক যথাযথভাবে পুরণ করতে হবে। অতঃপর নির্ধারিত ফি বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। ফি দেবার পর ট্রানজেকশন আইডি ফর্ম এর উপর লিখে দিতে হবে। আর যদি ফি অফিসে প্রদান করে থাকেন তাহলে ফি জমাদানের রশিদ সহ রেফারেন্স হিসেবে যে কাগজ পত্র সাবমিট করতে হবে, সেগুলো ফরমে লিখে দিতে হবে।

  • ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য যেসমস্ত কাগজপত্র রেফারেন্স হিসেবে জমা দিতে হবে তা হলঃ
  • অনলাইন জন্ম সনদ
  • গ্যাস/বিদ্যুত বিলের কপি
  • চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর এর প্রত্যয়ন পত্র
  • পৌরকরের রশিদ
  • এন আইডি কার্ডের কপি।

উপরোক্ত কাগজগুলি সংযোজন করার মূলত কারণ হচ্ছে, এই সমস্ত ডকুমেন্টস গুলোতে আবেদন কারির স্থায়ী ঠিকানা সংরক্ষিত থাকে। তাই এগুলো আবেদন পত্রের সাথে দিলে , সহজেই আপনার এনআইডি কার্ডের ঠিকানা সংশোধন হয়ে যাবে। আবেদনের পর নির্বাচন অফিস থেকে এস এম এস প্রদানের মাধ্যমে আপডেট দেয়া হবে। প্রথম এস এম এস পাবার পর বুঝা যাবে, আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, অর্থাৎ আবেদন করার কনফার্মেশন পাওয়া যাবে। এরপরের মেসেজে জানানো হবে, বিষয় টি অনুমোদিত হয়েছে কিনা। অনুমোদিত না হয়ে থাকলে , কেন হচ্ছেনা, আর কোন কাগজপত্র জমা দিতে হবে কিনা তা মেসেজ এ জানানো। আর কোন কারণে কারিগরি সমস্যার কারণে মেসেজ না পেলে, আবেদনের জমা স্লিপ টি নিয়ে অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ডের রক্তের গ্রুপ এবং জন্মস্থান কিভাবে সংশোধন করা যাবে?

আপনারা সবাই জানেন, এন আই ডি/ভোটার আইডি কার্ডের রক্তের গ্রুপ এবং জন্মস্থান উল্লেখ থাকে।এন আই ডি কার্ড আমরা সাধারণত যে উদ্দেশে ব্যবহার করে থাকি, তার প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে রক্তের গ্রুপ বা জন্মস্থান খুব একটা ব্যবহার করতে দেখা যায় না। কারণ জব, বা অফিসিয়াল ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ দরকার হয়না। আবার জন্মস্থান ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনা। এসব ক্ষেত্রে অনেকের এনআইডি/ ভোটার কার্ডেই এই দুইটি বিষয় ভুল থাকলেও সেটা নিয়ে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুব একটা বেশি মাথা ঘামায় না। কারণ আমাদের দেশের অনেকেই নিজের রক্তের গ্রুপ জানেন না, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এরকম দেখা যায়। আবার শহরে অনেকেই নিজের এলাকা থেকে এসে বসবাস করে ,সেই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার মত হয়ে যায়। ফলে সে বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই লিখে ফেলে। যার ফলে তার জন্মস্থান এনআইডি কার্ডে ভুল থাকে।

রক্তের গ্রুপ বা জন্মস্থান সঠিক করার জন্য নির্বাচন অফিসে গিয়ে বা অনলাইন এ দুই পদ্ধতি করা যায়। অনলাইন এ হলে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ গিয়ে , প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করে , লগ ইন করতে হবে। এরপর প্রোফাইল অফশন এ গিয়ে, রক্তের গ্রুপ সহ সমস্ত ইনফরমেশন দেখা যাবে। এরপর রক্তের গ্রুপ বা জন্মস্থান , সম্পাদনা করে , পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। এই ধাপে সংশোধন জনিত , ফি দেবার অফশন থাকবে, সেটি পুরণ করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে, এই ধাপে সংশোধন সম্পর্কিত কিছু কাগজপত্রের সফটকপি দিতে বলা হবে। সেগুলো দিয়ে সাবমিট করলে আপনি মোবাইলে এস এম এস পাবেন। সাবমিট করা হয়ে গেলে আবেদনের বিপরীতে একটি পি ডি এফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন, যা পরবর্তীতে অফিসে যেয়ে খোঁজ নিতে গেলে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

একই ভাবে নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম- ২ সংগ্রহ করেও আপনি রক্তের গ্রুপ বা জন্মস্থান পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এখন জেনে নেই ,রক্তের গ্রুপ বা জন্মস্থান সংশোধন করতে কি কি কাগজ পত্র জমা দিতে হয়

  • রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার প্যাথলজি রিপোর্টঃ রক্তের গ্রুপ সংশোধন করার জন্য, অবশ্যই কোন ভাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রক্ত পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিতে হবে। তারপর সেই রিপোর্ট ফটোকপি করে, আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধনঃ জন্মস্থানের ক্ষেত্রে, জন্ম নিবন্ধন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তবে এক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন দাখিল করতে হবে।
  • চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর এর প্রত্যয়ন পত্রঃ ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান অথবা, কাউন্সিলর কর্তৃক দেয়া প্রত্যয়ন পত্রের ফটোকপি আবেদনের সাথে দিয়ে দিতে হবে, অনলাইনে আবেদন করলে, সেই ক্ষেত্রে স্ক্যান করে, বা ছবি তুলে আপলোড করে দিতে হবে
  • আবেদনকারির এনআইডি কপিঃঅনলাইনে আবেদন করলে আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবেনা। কিন্তু নির্বাচন অফিসে আবেদন করলে আবেদন পত্রের সাথে আই ডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে দিবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার আইডি কার্ডে নিজের নাম কিভাবে সংশোধন করা যাবে?

এবার আলোচনা করব, এনআইডি কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের বিষয়টি। অর্থাৎ যদি আপনার নামটি আংশিক বা পুরোপুরি ভুল থাকে, তাহলে কিভাবে সংশোধন করবেন?

ভোটার আইডি কার্ডের ক্ষেত্রে সাধারণত নাম পুরোপুরি ভুল আসেনা। মূলত একজন মানুষ তার নিজের নাম কিভাবে লেখে, যদি কোনভাবে তার ব্যতিক্রম হয়, অথবা বানানের ভুল হয়, অথবা পদবী মিসিং হয়, এইসব ক্ষেত্রে নিজের নাম ঠিক করতে হয়।

অনলাইন বা নির্বাচন অফিসে গিয়ে এই সংশোধনের কাজটি করা যাবে। অফিসে গিয়ে করলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম 2 পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।এর সাথে নিন নির্ধারিত ফি প্রদান করে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে করলে পূর্বে বর্ণিত নিয়মে করা যাবে।

এখন জেনে নিন, নিজের নাম সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়?

  • এসএসসি পরীক্ষার সনদঃ এসএসসি পরীক্ষা একটি পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কারণে, এ পরীক্ষার সনদ এর নাম একটি গ্রহণযোগ্য রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। ঠিক যেমনটা জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে করে। এটি ফটোকপি করে আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়।আর অনলাইনে সাবমিট করলে স্ক্যান করে সাবমিট করতে হবে।
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদঃ অনলাইনের মাধ্যমে তৈরিকৃত জন্ম সনদ অবশ্যই রেফারেন্স হিসেবে জমা দিতে হবে।

যদি কোন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অর্থাৎ এসএসসি সনদ না থাকে,তিনি নিম্নোক্ত কাগজপত্র গুলো আবেদনের সাথে জমা দিবেন।

  • অনলাইন জন্ম সনদ (বাধ্যতামূলক )
  • কাবিননামা বা বিবাহ সনদ (যদি থাকে)
  • স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি (যদি থাকে)
  • ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র
  • অফিসের বেতনের সেলারি শীটের কপি (চাকুরী জিবি হলে)

আপনার পুরা নাম যদি পরিবর্তন করতে চান তাহলে, সমস্ত কাগজপত্র সাথে একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত একটি এফিডেফিট/হলফনামা জমা দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র জমা দিলেও সরেজমিন তদন্ত করেই রিপোর্ট জমা দেবার পরই, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা , আবেদন টি গ্রহণ বা বাতিল করে দিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, পুরা নাম পরিবর্তনের বিষয়গুলো অনেকটা সময় সাপেক্ষ হয় এবং অনেক সময় পরও এটি অনুমোদন নাও হতে পারে। প্রত্যেকটি ধাপেই এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে আপডেট দেয়া হবে।

এবার আপনাদেরকে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানাতে চাই, যা উপরোক্ত লেখাটি পড়ে, আপনার অনুসন্ধিৎসু মন জানতে চাইছে! আসুন দেখি এগুলো কি!!

প্রশ্নঃ কোন এনআইডি/ভোটার আইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?

উত্তরঃ এই ক্ষেত্রে একটি তথ্য মাত্র একবারই ঠিক করা যাবে। তবে যুক্তিপূর্ণ না হলে গ্রহণযোগ্য হবেনা 

প্রশ্নঃ ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করতে কয়দিন লাগে?

উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর টি মূলত স্থান,কাল এবং পাত্রের উপর নির্ভরশীল। যদি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের আবেদন হলে দ্রুত হয় আবার বিভাগীয় পর্যায়ের হলে, সময় বেশি লাগে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেশি ব্যস্ত হলে বা আবেদন এর মাত্রা বেশি হলেও সময় অনেক সময় বেশি লাগতে পারে। 

প্রশ্নঃ ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য কোথায় সংশোধন হয়?

উত্তরঃ আবেদন জমা পড়ার পর সমস্ত আবেদন গুলি হেড অফিসে চলে যায়। সেগুলো আবেদনের ধরন অনুসারে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি। তুলনামূলক ছোট এবং সাধারণ ভুল গুলো ‘ক’ ক্যাটাগরিতে থাকে, এভাবে ‘ঘ’ তে অপেক্ষা কৃত ঝামেলাপূর্ণ এবং জটিল আবেদন গুলো থাকে। এগুলোর ফলাফল হেড অফিস থেকে আসে।

প্রশ্নঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম- ২ কি?

উত্তরঃ এটি স্মার্ট কার্ড সংশোধন করার জন্য, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রণীত একধরনের বিশেষ ফর্ম। এটি পূরণ করেই , যে কোন ধরনের সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হয়

প্রশ্নঃ স্মার্ট কার্ড সংশোধন ফি কিরকম হয়?

উত্তরঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এর জন্য সাধারণ স্মার্ট কার্ড ডেলিভারী ফি ২৩০ টাকা।আর অন্যান্য তথ্য সংশোধন এর জন্য সাধারণ স্মার্ট কার্ড ডেলিভারী ফি ১১৫ টাকা ।একসাথে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য সংশোধন এর জন্য সাধারণ স্মার্ট কার্ড ডেলিভারী ফি ৩৪৫ টাকা।


জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট কার্ড দেশের যে কোন নাগরিকের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার এই সুবিধা নির্বাচন কমিশন এর একটি যুগোপযোগি পদক্ষেপ। তাই এই বিষয়ে আপনাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন প্রকিয়া কে ব্যাখ্যা করে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। এই লেখা টি যদি আপনাদের কোন উপকারে আসে, তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। এরপরও যদি কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের কে জানাবেন আমরা তথ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।