পিরামিডের শহর মিশর। প্রাচীন ও মধ্যকালীন ফ্যারাওদের রাজত্বকালে তাদের ও তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ হিসেবে এই পিরামিডগুলো তৈরি হত। কায়রো শহরের গিজায় সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো রয়েছে। আর এই কায়রো হচ্ছে মিশরের রাজধানি। এ পর্যন্ত মোট ১৩৮টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে। সবচেয়ে বড় পিরামিড  খুফুর পিরামিড আর সবচেয়ে পুরনো পিরামিড জোসারের পিরামিড। বিখ্যাত এই পিরামিডগুলো দেখতে হলে যেতে হবে মিশর আর মিশর যাবার প্রথম ধাপ হচ্ছে মিশর ভিসা করানো। মিশর ভিসা আপনি চাইলে একা একা করতে পারেন অথবা কোন ট্র্যাভেল এজেন্টের সহায়তা নিয়েও করতে পারেন। 

মিশর টুরিস্ট ভিসার জন্য ব্যক্তিগতভাবে মিশরীয় কনস্যুলেটে সরাসরি বা ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগে ৭-১০ কর্ম দিবস আর ভিসার মেয়াদ হয় ৬ মাস। অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যেই আপনাকে যেতে হবে এবং সর্বচ্চ ৩০ দিন আপনি মিশর থাকতে পারবেন। 

মিশরীয় দূতাবাসঃ

ঠিকানাঃ বাড়ি # ৯, সড়ক # ৯০, গুলশান # ২, ঢাকা-১২১২।
ফোনঃ +৮৮-০২-৮৮৫৮৭৩৭, +৮৮-০২-৮৮৫৮৭৩৮, +৮৮-০২-৮৮৫-৮৭৩৯
ফ্যাক্সঃ +৮৮-০২-৮৮৫৮৭৪৭
ই-মেইলঃ egypt.emb.dhaka@mfa.gov.eg
আবেদন জমাদানঃ সোমবার থেকে বুধবার – সকাল ১০ টা থেকে ১১ পর্যন্ত
পাসপোর্ট সংগ্রহঃ সোমবার থেকে বুধবার – বিকাল ৩টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত

মিশর টুরিস্ট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো ঠিকভাবে তৈরি করে ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে পারলে আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনা থাকবে অনেকটাই নিশ্চিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে আপনার ভিসা আবেদনের সাথে ঠিকভাবে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো তৈরি করবেন।

১. ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম

আপনাকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পুরন করতে হবে এবং ফর্মে নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট অনুযায়ী সাক্ষর করতে হবে। এই লিংক এ ক্লিক করে মিশর ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি ডাউনলোড করুন এবং ফর্মটি পূরণ করার জন্য পিডিএফ ফাইল এডিটরের সাহায্য নিতে এই লিংকটি দেখুন

২.পাসপোর্ট

নূন্যতম  ৬ মাস মেয়েদ সম্পন্ন একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঠিক সেদিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে ফলে ভিসা পেতে পেতে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমে যায়, এমন হলে অনেক সময় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কিছুদিন বেশি থাকলে খুবই ভালো হয় যেন ভিসা পাওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে। 

পাসপোর্টে অবশ্যই অন্তত দুটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যাতে করে ভিসা স্টিকার এবং ইমিগ্রেশন ষ্ট্যাম্প ওই পাতাতে দেয়া যায়। সেই সাথে সকল পুরাতন পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।

৩. ছবি

২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি (সাইজ হবে ৩৫ মি.মি X ৪৫ মি.মি) লাগবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, ছবির সঠিক মাপ এবং ৩ মাসের আগে তোলা ছবি গ্রহনযোগ্য হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ছবির পিছনে আপনার সাক্ষর করে দিতে পারেন।

৪. প্রুফ অফ প্রফেশন – পেশার প্রমানপত্রঃ 

মিশররের ভিসা পেতে হলে আপনার প্রফেশনের একটি প্রমানপত্র দিতে হবে। সেক্ষেত্রে

?আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট), ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে। এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট) অবশ্যই অফিসের প্যাডে অফিস কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত করা থাকতে  হবে এবং আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার এন ও সি তে উল্লেখ করা  থাকতে হবে। নো অব্জেকশন সার্টিফিকেটের স্যাম্পল কপি এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।

? আপনি যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নাম স্পষ্ট অক্ষরে আছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে। প্রপ্রাইটরশিপ (একক মালিকানা) বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স, লিমিটেড কম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমরেন্ডাম কপি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে।  

? আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে বি এম ডি সি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সার্টিফিকেট অথবা আপনার হাসপাতালের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

? আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন তাহলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট অথবা আপনার চেম্বারের  প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।

? আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্কুল / কলেজ / ইউনিভার্সিটির প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট  (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) অথবা বৈধ আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবে।

বি দ্রঃ  উপরের কোন ডকুমেন্ট বাংলায় দেয়া যাবে না যদি বাংলায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।

৫. প্রুফ অফ ফিনান্সিয়াল  ডকুমেন্টঃ 

ভ্রমণের সক্ষমতা প্রমানের জন্য আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে।ব্যাংক স্টেটমেন্টটি হতে হবে বিগত ৬ মাসের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পার্সোনাল অথবা স্যালারি একাউন্ট ও হতে পারে। আপনি একা ট্রাভেল করলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ন্যূনতম ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অবশিষ্ট থাকতে হবে। আর যদি আপনি ফ্যামিলি নিয়ে ট্রাভেল করেন তাহলে প্রতিজনের জন্য ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা করে স্টেটমেন্টে অবশিষ্ট থাকতে হবে।

৬. কভারিং লেটারঃ

ভিসা অফিসার, এম্বাসি অফ মিশর, ঢাকা বরাবর একটি কভারিং লেটার লিখে জমা দিতে হবে। কভার লেটারে আপনার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, পেশা, পেশার উপাধি, কবে যেতে চান এবং আপনার ভরন পোষণ কে বহন করবে এইসব কিছু উল্লেখ থাকতে হবে। ফ্যামিলি নিয়ে গেলে সবার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার ও কভারিং লেটারে উল্লেখ থাকতে হবে।

৭. মিশরে হোটেল বুকিং কপি

মিশরে আপনি কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন তার একটি বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি হলেই হবে কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ভিসা হয়ে যায় কেবল তখনি আপনি বুকিং কনফার্ম করতে পারেন। হোটেল বুকিং আপনি নিজে নিজে করতে পারেন অথবা কোন ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতাও নিতে পারেন।

৮. ঢাকা মিশর ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকিট বুকিং কপি

ঢাকা মিশর ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেটের বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। ভিসা হয়ে যাবার পর টিকিটটি কনফার্ম করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিতে পারেন।

৯. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি

আপনার মূল ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে দেয়া তথ্যের সাথে আই ডি কার্ডের তথ্য হুবুহু মিল থাকে।

এই ছিল মিশর টুরিস্ট ভিসা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের লিস্ট। আপনি যদি ফ্যামিলি নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনার কাগজপত্রের সাথে আপনার ফ্যামিলি মেম্বারদের যেসকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে সেগুলো নিন্মরূপ

ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ 

১. সবার পাসপোর্ট এবং ২ কপি ছবি (সাইজ হবে ৩৫ মি.মি X ৪৫ মি.মি)।
২. স্ত্রীর জন্য মেরিজ সার্টিফিকেট (যদি পাসপোর্টে আপনার নাম উল্লেখ না থাকে)।
৩. সন্তানের জন্য জন্মসনদ অথবা এন এই ডি কার্ডের ফটোকপি।

মিশর টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং ফি

ভিসা  ফিভিসার মেয়াদকতদিন থাকা যাবে
৩,৭০০ টাকা সিঙ্গেল এন্ট্রি৬ মাস৩০ দিন
৪,৬০০ টাকা মাল্টিপল এন্ট্রি৬ মাস৩০ দিন

মনে রাখবেন ভিসা প্রসেসের জন্য প্রদত্ত যেকোনো ডকুমেন্টস জাল প্রমাণিত হলে, আপনার ভিসার আবেদনটি নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যান হবে, এমনকি আপনি উক্ত এম্বাসির কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। এবং ইহা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং, এধরনের অভিপ্রায় থেকে বিরত থাকুন। 

বিঃ দ্রঃ কোন কারনে ভিসা না হলে ভিসা ফি ফেরতযোগ্য নয়।

আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ…