ভুটান সরকার দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে “হাই ভ্যালু” এবং “লো ইমপ্যাক্ট ট্যুরিজম” নীতি অনুসরন করে। এই নীতিতে ভুটান সরকার প্রত্যাক পর্যটকের কাছ থেকে “সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি” (এস ডি এফ) যা ভুটানের উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য পর্যটকের কাছ থেকে শুল্ক গ্রহন করে থাকেন। আর এই দৈনিক শুল্কের পরিমাণ হচ্ছে প্রতিদিন ১২০০ টাকা এবং ৬ থেকে ১২ বছর বাচ্চাদের জন্য ৬০০ টাকা আর ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য ফ্রি।

ভুটান ভ্রমণের জন্য ভিসা শুধুমাত্র ইমিগ্রেশন বিভাগ, স্বরাষ্ট্র ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভুটানের ভিসা দিয়ে থাকে। ভুটান এম্বাসি কোন প্রকার ভিসা প্রদান করে না। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, মালদ্বীপ এর পাসপোর্ট ধারী সকলের জন্য অন-এরাইভাল ভিসা ব্যবস্থা আছে যা ভুটান এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করা যায়। আর বাই রোডে ইন্ডিয়া হয়ে যদি ভুটান যেতে চান তবে ইন্ডিয়ার ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হবে। ইন্ডিয়া হয়ে ভুটান  প্রবেশ করতে হলে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন পয়েন্ট জয়গাঁও এবং ভুটানের অংশ ফুয়েন্টশোলিং দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

ভূটান অন-এরাইভাল ভিসার জন্য যে সব ডকুমেন্টস প্রয়োজন।

  • ৬ মাস মেয়াদ সম্পূর্ণ পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের স্ক্যান কপি।
  • ট্রাভেল ইন্সুরেন্সের কপি। আপনি যতদিন ভুটান থাকবেন ততদিনের জন্য ইনস্যুরেন্স নিলেই চলবে।
  • সাম্প্রতি তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

ভুটান অন-এরাইভাল ভিসা ফি

ভিসা ফি – ৪০ ইউ এস ডলার জনপ্রতি।

ভুটান ভিসার জন্য কিভাবে অনলাইনে আবেদন করা যায়?

ভুটানের ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হলে ভুটান ট্যুরিজম কাউন্সিলে নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে, যিনি ভুটানের পর্যটন কাউন্সিলে আপনার পক্ষে ভিসার আবেদন জমা দেবেন। ভুটানের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:

  • আপনার ট্রিপ বুক করার জন্য ভুটান ট্যুরিজম কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে (এখানে) নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে যাকে আপনার কাছে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয় এমন একটি খুঁজে বের করুন। আপনার ভিসার আবেদনের জন্য তারাই আপনাকে সাহায্য করবে।
  • ট্যুর অপারেটরকে ট্যুরের খরচ প্রদান করুন এবং ট্যুর অপারেটরদের কাছে আপনার প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস এবং তথ্য পাঠান।ডকুমেন্টসগুলো নিন্মরুপঃ
    • আপনার পাসপোর্টের রঙিন স্ক্যান কপি যার মেয়াদ ভুটানে প্রবেশের দিন থেকে আরও ছয় মাস পর্যন্ত রয়েছে।
    • আপনার পেশার প্রমাণপত্র।
    • আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য এবং ঠিকানা।
  • ট্যুর অপারেটর আপনার পক্ষ থেকে ভুটান ট্যুরিজম কাউন্সিলে ভিসার আবেদন জমা দেবে।
  • ভুটান ট্যুরিজম কাউন্সিল আপনার আবেদন পর্যালোচনা করে একটি ক্লিয়ারেন্স লেটার দেবে যা আপনাকে প্রিন্ট করতে হবে এবং বিমানবন্দরে সাথে করে নিয়ে আসতে হবে।
  • ট্রাভেল ইন্সুরেন্স করতে হবে।  যা ট্যুর অপারেটর প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত নয়।
  • বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসার ভিসা ক্লিয়ারেন্স লেটার পর্যালোচনা করে আপনার পাসপোর্টে আসল ভিসা স্ট্যাম্প করে দেবে।

অনলাইনে ভুটানের ভিসা পেতে সময় লাগবে তা নির্ভর করে আপনি কখন আবেদন করচেন তার উপর। সাধারণত, ভুটানের পর্যটন কাউন্সিল আপনার যাত্রার ১-২ সপ্তাহ আগে আপনার ক্লিয়ারেন্স লেটার দিবে, তবে তারা কখনও কখনও এর চেয়ে বেশি সময় নিতে পারে।তাই আপনি যখন ট্রাভেল করতে চান তার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে ভুটানের ভিসার জন্য আবেদন করুন, তবে আপনার ভ্রমন তারিখের কয়েক মাস আগে আবেদন করা ভাল আইডিয়া হতে পারে।

ভুটান ভিসা নিয়ে কিছু প্রশ্ন

১। ভুটান ভিসার মেয়াদ কতদিন হয়ে থাকে?

উত্তরঃ ভুটানের ভিসা প্রবেশের তারিখ থেকে শুরু করে ছয় মাস পর্যন্ত এবং এই ভিসা দিয়ে একবার ই প্রবেশ করা যাবে।

২। আমি কি ভুটানের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারি?

উত্তরঃ জি, বাড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন, যিনি আপনার পক্ষে পর্যটন কাউন্সিলের কাছে একটি অনুরোধ জমা দেবেন।

৩। যদি আমার ভুটানের ভিসা না হয় তবে আমি কি ট্যুরের টাকা ফেরত পাব?

উত্তরঃ আপনি ভুটানে ট্যুরের টাকা ফেরত পাবেন কিনা তা ট্যুর অপারেটরের নীতির উপর নির্ভর করে। এই কারণেই ট্রিপ ব্যাহত কভারেজ সহ একটি ভ্রমণ ইনস্যুরেন্স পলিসি কেনা একটি ভাল আইডিয়া।

৪। আমি কিভাবে ভিসা বা পারমিটের জন্য আবেদন করব?

উত্তরঃ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভিসা বা পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন, অথবা ভ্রমণ ভিসা বা পারমিট করার জন্য ট্যুর অপারেটরে সাহায্য নিতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের ত্রাভেলাররা ভুটানে প্রবেশের সময় তাদের ভিসা প্রসেস করতে পারেন এবং ভারত থেকে আসা ট্রাভেলাররা পোর্টে প্রবেশের সময় পারমিট প্রক্রিয়া করতে পারে।

৫। ভুটান ভিসার মেয়াদ কতদিন দেয়?

উত্তরঃ ভুটান শুধুমাত্র সেই দিনগুলির জন্য থাকার অনুমতি দেবে যতদিনের জন্য আপনি SDF প্রদান করেছেন।

৬। Sustainable Development Fee (SDF) মানে কি?

উত্তরঃ ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২২-এ সকল দর্শনার্থীদের জন্য ভুটান পুনরায় খোলার পরে ভুটানের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক দর্শনার্থীর কাছ থেকে একটি ফি আদায় করেন।এই ফি কেই Sustainable Development Fee বলা হয়, যাকে সংক্ষেপে SDF বলে।

৭। ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স কি বাধ্যতামূলক?

উত্তরঃ হ্যাঁ. সমস্ত দর্শকদের অবশ্যই তাদের পরিদর্শনের সময়কালের জন্য সম্পূর্ণ বৈধ ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স থাকতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের দর্শক ব্যতীত সমস্ত দর্শনার্থীদের জন্য ভিসার আবেদন করার সময় থাকা আবশ্যক।

ভারত, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের দর্শকদের জন্য ভুটান ইনস্যুরেন্স প্রদানকারীদের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বীমা কেনার সুযোগ রয়েছে এই জন্য পর্যটন তথ্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন, অথবা ভুটান ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।