পর্যটকদের কাছে সাগর কন্যা নামে পরিচিত ১৮ কিলোমিটারের কুয়াকাটা  সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। কুয়াকাটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুইটাই দেখা যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কিভাবে যেতে হয় তার বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে কুয়াকাটা:

সড়কপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় ১১-১২ ঘন্টা।ঢাকার গাবতলি,কল্যানপুর, সায়দাবাদ, আব্দুল্লাহপুর থেকে সাকুরা পরিবহন এবং ঈগল পরিবহনের বাস এই রুটে চলাচল করে।বাস ভাড়া নন এসি -৬৫০ টাকা। এসি-১০০০ টাকা।

নদীপথে ৪ টি উপায়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়।

১ম উপায়ঃ পটুয়াখালীর লঞ্চে কুয়াকাটা
ঢাকা লঞ্চঘাটের ওয়াইজঘাট লঞ্চঘাট থেকে পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়। বরিশালের লঞ্চগুলো যেখানে রাখা হয় তার পশ্চিম পাশের লঞ্চঘাটটি হচ্ছে ওয়াইজঘাট লঞ্চঘাট আর পূর্বপাশের লঞ্চঘাটটি হচ্ছে লালকুঠি লঞ্চঘাট।লালকুঠি ঘাট থেকে চাদপুরের লঞ্চ এবং ওয়াইজঘাট থেকে পটুয়াখালীর লঞ্চ যাত্রা শুরু করে।প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে সাড়ে ৭ টার মধ্যে তিনটি লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পটুয়াখালীর লঞ্চগুলোর মধ্যে – সুন্দরবন ১৪,কাজল ৭,এ আর খান ১, প্রিন্স আওলাদ ৭ এবং সুন্দরবন ৭ উল্লেখযোগ্য। এই রুটের লঞ্চে ডেক শ্রেণির ভাড়া ৩০০ টাকা, সিংগেল কেবিন ১১০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা। এই রুটের লঞ্চগুলো সকাল ৬ টার দিকে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট পৌছায়। পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে যেতে হবে পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড। লঞ্চঘাট থেকে বাস টার্মিনাল অটোভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা।

পটুয়াখালী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটা দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বাস ভাড়া জন প্রতি ১৫০ টাকা।

২য় উপায়ঃ আমতলীর লঞ্চে কুয়াকাটা
ঢাকা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫ টায় শুধুমাত্র একটি লঞ্চ আমতলীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।এই রুটের লঞ্চগুলোর মধ্যে – এম ভি ইয়াদ -১ এবং নবনির্মিত বিলাশবহুল নৌযান এম ভি তরঙ্গ ৭ উল্লেখযোগ্য। এই রুটের লঞ্চে ডেক শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা।সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন -২৪০০ টাকা।

সকাল ৬-৭ টার মধ্যে লঞ্চ আমতলী পৌছায়। লঞ্চঘাট কাছেই আমতলী চৌরাস্তা।চৌরাস্তা থেকে কুয়াকাটা জাওয়ার জন্য বাস এবং মাহেন্দ্র পাওয়া যায়। দূরত্ব-৪০ কিলোমিটার । বাস ভাড়া জনপ্রতি-৮০ টাকা। এ পথে মাহেন্দ্র রিজার্ভ করেও সহজেই কুয়াকাটা যেতে পাড়বেন।

৩য় উপায়ঃ পায়রাবন্দরের লঞ্চে কুয়াকাটা
এই রুটের লঞ্চ চলাচল আপাতত বন্ধ আছে।শীগ্রই এই রুটের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে ।ঢাকা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে সাড়ে ৭ টার মধ্যে একটি লঞ্চ পায়রাবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।এই রুটের লঞ্চগুলোর মধ্যে এডভেঞ্চার ১১ উল্লেখ যোগ্য ।এই রুটের লঞ্চে ভ্রমন করলে সকাল বেলা সবচেয়ে বেশী সময় যাবত নদীর রূপ উপভোগ করতে পাড়বেন।এই রুটের লঞ্চে ডাক শ্রেণি-৪০০ টাকা।সিংগেল কেবিন- ১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন-২৪০০ টাকা।সকাল ১০ টার দিকে এই রুটের লঞ্চ খেপুপাড়া লঞ্চঘাটে ঘাট দেয়।খেপুপাড়া লঞ্চঘাট থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব মাত্র ২৪ কিলোমিটার । সংখ্যায় ৬-৭ জন হলে খেপুপাড়া লঞ্চঘাট থেকে মাহেন্দ্র রিজার্ভ করতে পাড়েন এছাড়াও বাসে যেতে চাইলে অটোতে কলাপাড়া বাসস্ট্যান্ড অথবা খেপুপাড়া ব্রীজের ওখানে গেলে কুয়াকাটার বাস পাবেন।খেপুপাড়া থেকে কুয়াকাটা বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা।

৪র্থ উপায়ঃ রিশালের লঞ্চে কুয়াকাটা
যদি সড়ক এবং নদীপথ দুটোই সমানভাগে উপনভগ করতে চান তাহলে বরশালের লঞ্চে বরিশাল যেতে হবে।প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে বরিশালের লঞ্চগুলো বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।এই রুটের লঞ্চগুলোর মধ্যে এম ভি মানামী , এডভেঞ্চার ৯,১ ,কীর্তোনখোলা ১০, পারাবত ১৮,১২ , সুরভী ৯ , কুয়াকাটা ২ উল্লেখযোগ্য । ডেক শ্রেণি-২০০ টাকা ।সিঙ্গেল কেবিন-১০০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন-২০০০ টাকা। ভোর সকালে লঞ্চগুলো বরিশাল লঞ্চঘাট পৌছায়।বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে যেতে হবে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড। ভাড়া ১০ টাকা। রূপাতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটার অনেক বাস পাবেন।দূরত্ব – ১১০ কিলোমিটার।ভাড়া- ২০০-২৫০ টাকা।

কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান সমূহ হোল- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, শুঁটকি পল্লী, গঙ্গা-মতিরজঙ্গল, ক্রাব আইল্যান্ড, ফাতরার বন, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, কেরানীপাড়া রাখাইন পল্লী, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, বাউফলের মৃৎশিল্প, সোনার চর, কুয়াকাটা কাঠের ইত্যাদি

লেখকঃ মাহামুদ হাসান শান্ত
ইউটিউব লিঙ্কঃ ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাবার উপায়